জিসান ই-মার্কেটিং-এর ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী। তাই সে প্রথমেই ই-মার্কেট যাচাই করে। অর্থাৎ অনলাইনে কারা পণ্য ক্রয় করতে পারে তাদেরকে প্রথমেই চিহ্নিত করার চেষ্টা করে। সম্ভাব্য ক্রেতা চিহ্নিত করার পর তাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে জিসান তার লক্ষ্য অর্জনে মার্কেট অডিট ও মার্কেট গবেষণা কার্যক্রমসহ মার্কেট তৈরির পদক্ষেপ ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বর্তমানে জিসান একজন সফল ই-মার্কেটার।
এ উপ-অধ্যায় থেকে আমরা ই-মার্কেটিং-এর লক্ষ্য, ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এবং ই-মার্কেটিং এর কৌশলসহ মার্কেট অডিট, মার্কেট গবেষণা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারব।
মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের জন্য ভ্যালু সৃষ্টি করে এবং ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ক্রেতাদের সাথে সুদৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করে । ই-মার্কেটিং বলতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী ক্রয়-বিক্রয়ের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে বোঝায়। নিচে ই-মার্কেটিং-এর লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় ধাপসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. ই-মার্কেটিং-এর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সংজ্ঞায়িতকরণ (Defining digital marketing goals and objectives): ই-মার্কেটিং-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সংজ্ঞায়িতকরণের মাধ্যমে সহজেই জানা যাবে যে, ই-মার্কেটিং দ্বারা তুমি কী অর্জন করতে চাও। তাই প্রথমেই ই-মার্কেটিং এর লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
২. দর্শক বা গ্রাহক চিহ্নিতকরণ (Identifying audience or customers ) : ই-মার্কেটিং-এর লক্ষ্য ঠিক করার পর অবশ্যই তোমাকে তোমার সম্ভাব্য অডিয়েন্স বা গ্রাহকদের চিহ্নিত করতে হবে। কারা তোমার পণ্য ক্রয় করতে পারে তাদের বয়স, আয়, পছন্দ ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে। বাজার বিভক্তিকরণের কোন অংশে তুমি মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে তা নির্দিষ্ট করতে হবে। এজন্য তুমি Buyer Persona Template-এর সহযোগিতা নিতে পারো ।
৩. মার্কেট শেয়ার ও প্রতিযোগী চিহ্নিত করা (Identifying market share and competitors) : এপর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণ তথা প্রতিযোগীদের অবস্থান বিশ্লেষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ই-মার্কেটিং-এ বর্তমানে কে বা কোন প্রতিষ্ঠান তোমার প্রতিযোগী তাদের চিহ্নিত করতে হবে ও তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। প্রতিযোগীরা কত ভাগ বাজার দখল করে আছে আর তোমার কতটুকু বাজার দখল করার সামর্থ্য আছে তা জানতে হবে। প্রতিযোগী বিশ্লেষণে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে-
* কোন ধরনের ক্রেতাদেরকে প্রতিযোগীরা টার্গেট করেছে?
* কোন ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেল ব্যবহার করছে?
* কোন দিক থেকে তারা শক্তিশালী?
* তাদের দুর্বল দিক কোনটি?
৪. SWOT বিশ্লেষণ (SWOT analysis): মার্কেটিং বা ই- মার্কেটিং এর লক্ষ্য নির্ধারণে অবশ্যই তোমাকে তোমার শক্তি (Strength), দুর্বলতা (Weakness ), সুযোগ ( Opportunity) এবং হুমকি (Threat) বিবেচনা করতে হবে। SWOT বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুমি তোমার কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারবে।
৫. ই-মার্কেটিং-এর জন্য বাজেট পরিকল্পনা (Budget planning for e-marketing): ই-মার্কেটিং এর লক্ষ্য নির্ধারণের সময় অবশ্যই তোমাকে তোমার আর্থিক সামর্থ্য তথা বাজেট সম্পর্কে পরিকল্পনা করতে হবে। তোমার বাজেটের ওপর ভিত্তি করেই তোমার ই-মার্কেটিং বিজনেস পরিচালিত হবে। এই বাজেটের ওপরই তোমার চ্যানেলের ব্যবহার নির্ভর করবে। সেই অনুযায়ী কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
৬. ডিজিটাল চ্যানেল নির্বাচন (Selecting digital channel): একটি কন্টেন্ট তৈরির পূর্বে অবশ্যই তোমাকে ডিজিটাল চ্যানেল নিয়ে ভাবতে হবে। তোমার দর্শক, লক্ষ্য ও বাজেটের সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে ডিজিটাল চ্যানেল নির্দিষ্ট করতে হবে। যেমন— তোমার দর্শক বা গ্রাহকরা তরুণ হলে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ডিজিটাল চ্যানেল হিসেবে ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুক ব্যহার করতে পারো।
৭. ডিজিটাল বা ই-মার্কেটিং এর কৌশল উন্নয়ন (Developing Digital or E-marketing Strategy): চ্যানেল নির্ধারণ করার পর তোমাকে অবশ্যই ই-মার্কেটিং-এর কৌশল ঠিক করতে হবে। প্রতিযোগীদের সার্বিক অবস্থা জানার পর এমনভাবে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, যাতে তুমি মার্কেট লিডার হতে পারো।
৮. মার্কেটিং ক্যালেন্ডার তৈরি (Create a marketing calendar ): যেকোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনে একটি বার্ষিক ক্যালেন্ডার তৈরি করা দরকার। এই ক্যালেন্ডার হলো লক্ষ্য অর্জনের একটি গাইডলাইন বা রোডম্যাপ। এরূপ ক্যালেন্ডারে পুরো বছরের কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৯. ফলাফল পরিমাপ এবং কে পি আই (Measuring results and key- performance indicator [KPI]): কখনোই ভাবতে নেই যে কাজ কমপ্লিট হয়ে গেছে। ই-মার্কেটিং-এর কার্যক্রম ২৪/৭/৩৬৫ দিন হিসেবে সার্বক্ষণিক চলমান। ক্রেতা ও কর্মচারী কর্মকর্তাদের নিকট হতে সবসময় ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া জানতে হবে। ই-মার্কেটিং-এর লক্ষ্য নির্ধারণের সর্বশেষ ধাপ হলো ফলাফল মূল্যায়ন। এজন্য KPI ব্যবহার করে ফলাফল পরিমাপ করা যেতে পারে। পরিশেষে বলা যায় যে, লক্ষ্য নির্ধারণে ওপরের ধাপগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। উল্লেখ্য যে, লক্ষ্য হওয়া উচিত SMART। আর এখানে SMART বলতে
S = Specific
M = Measurable A = Achievable
R = Relevant
T = Time bound.
এক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদেরকে আলাদা করে মার্কেট ও অডিট সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে। মার্কেট (Market) : কোনো পণ্য বা সেবার বর্তমান ও সম্ভাব্য ক্রেতার সমষ্টিকে বাজার বলে ।
→ অডিট (Audit) : সাধারণ ভাষায়, অডিট হলো যেকোনো সত্তা বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক তথ্যের একটি পরিদর্শন এবং স্বাধীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অর্থাৎ, 'A' Audit is an independent examination of financial in formation of any entily."
→ মার্কেট অডিট (Market audit) : একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট মার্কেটকে ঘিরে পরিচালিত আর্থিক তথ্যের প্রকৃত হিসাব-নিকাশই হলো মার্কেট অডিট। এক্ষেত্রে মার্কেটের আকৃতি, আইনগত ও আর্থিক বিষয় যাচাই-বাছাই করা হয়।
সাধারণ ভাষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে নতুন জ্ঞান অর্জনের পদ্ধতিকে গবেষণা বলে। বাজারজাতকরণ বা মার্কেটিং সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা দূর করা এবং মার্কেটিং এর সাফল্য নিশ্চিত করাকে মার্কেটিং গবেষণা বলে । নিচে মার্কেট গবেষণার পদ্ধতি ও ধাপসমূহ উপস্থাপন করে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সংজ্ঞায়িতকরণ (Identifying and defining the problem): মার্কেট গবেষণার প্রথম ধাপ হলো সমস্যা চিহ্নিত ও তা সংজ্ঞায়িত করা। এখানে সমস্যা বলতে সাধারণ সমস্যার প্রকৃতি বা একটি বিবৃতিকে বোঝায়। সমস্যা চিহ্নিত করতে না পারলে কখনোই গবেষণার ফলাফল সঠিক হয় না ।
২. সমস্যার প্রস্তাব উন্নয়ন (Developing an approach to the problem): সমস্যা চিহ্নিত হবার পর দ্বিতীয় কাজ হলো মার্কেটিং গবেষণার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তাব উন্নয়ন করা। বাজেটসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়গুলো এক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হয়। সমস্যার প্রস্তাব উন্নয়ন নিচের বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে।
* গবেষণা প্রশ্নমালা ।
* সেম্পলিং ও সার্ভে মেথড।
* তত্ত্বীয় কাঠামো প্রণয়ন
* প্রয়োজনীয় তথ্য সুনির্দিষ্টকরণ।
৩. গবেষণার নকশা প্রণয়ন (Research design formulation): এটি হলো মার্কেট গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মার্কেট গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর কাঠামো বা নকশা প্রণয়ন করা হয়। এ ধাপে গবেষণা ডিজাইন করা ছাড়াও প্রশ্নমালার সম্ভাব্য উত্তরগুলো নির্ধারণ করা হয়। গবেষণার নকশা প্রণয়নে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়।
* তথ্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ।
* মাধ্যমিক উপাত্ত বিশ্লেষণ।
* উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি (জরিপ, পরীক্ষণ)।
* প্রশ্নপত্র ডিজাইন ।
* নমুনায়ন প্রক্রিয়া ও উপাত্ত বিশ্লেষণ ।
৪. মাঠকর্ম বা উপাত্ত সংগ্রহ (Field work or data collection) : বাজার এবং বাজারজাতকরণ বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্ভুল তথ্য বা উপাত্তের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মাঠকর্মী বা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা উপাত্ত সংগ্রহে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহের কয়েকটি উপায় নিচে তুলে ধরা হলো ।
* ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
* টেলিফোনভিত্তিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
* অনলাইনে সাক্ষাৎকার গ্রহণ ।
* ডাকযোগে সাক্ষাৎকার গ্রহণ।
৫. উপাত্ত প্রস্তুতকরণ ও বিশ্লেষণ (Data preparation and analysis): সংগৃহীত তথ্য থেকে অধিকতর নির্ভুল তথ্যগুলো আলাদা করে বিশ্লেষণ করতে হয়। উপাত্ত প্রস্তুতকরণ ও তা সংশোধন করা ছাড়াও যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়। যথাযথভাবে উপাত্ত বিশ্লেষণে বিভিন্ন অফিস প্রোগ্রাম যেমন- Excel, spss ইত্যাদির সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
৬. প্রতিবেদন তৈরি ও উপস্থাপন ( Preparing report and presentation): মার্কেট গবেষণার সর্বশেষ ধাপ হলো প্রতিবেদন তৈরি ও তা উপস্থাপন করা। এ ধরনের রিপোর্ট অবশ্যই লিখিত হওয়া প্রয়োজন। প্রতিবেদন দেখার পর মার্কেটিং ব্যবস্থাপক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
যেকোনো ব্যবসায়ের জন্য, তথ্য-উপাত্ত হলো একটি মূল্যবান সম্পদ, যা এর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতা বাড়াতে সাহায্য করে। সঠিক তথ্য-উপাত্ত হ্যান্ডলিং এবং নির্ভুলতা কার্যকর ব্যবসায়িক ফাংশনগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। ডেটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার দিয়ে ব্যবসায় সহজেই বড় ডেটা সঞ্চয় ও পরিচালনা করতে পারে। রিপোর্টিং এবং ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুসারে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রায় ২.৫ বিলিয়ন (Billion) গিগাবাইট তথ্য সৃষ্টি করে। কোম্পানিগুলোর জন্য মূল্যবান বাইট ডেটা সঠিকভাবে পরিচালনা করা অপরিহার্য। ম্যানুয়ালি এই ডেটা পরিচালনা করা ঝামেলা। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত প্রসেস সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ধাপে ধাপে সঠিক বিশেষণ এবং কার্যকরভাবে ডেটা পরিচালনা করতে সহায়তা করে। যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ সঠিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ডেটা পর্যালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছে তারা ১২% পর্যন্ত আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত প্রসেস সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে—ডেটা ওয়্যারহাউজিং, ডেটা বিশ্লেষণ, ডেটা কমপ্লায়েন্স ডেটা গভর্নেন্স ।
প্রতিষ্ঠানের জন্য সঠিক ডেটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার বেছে নিতে কয়েকটি বিষয় বিবেচ্য। যথা— ডেটা ক্লিনিং, ডেটা একত্রীকরণ, ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস, অসম ডেটা উৎসগুলোর সাথে একত্রীকরণ, বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতাগুলোর পরিমাপযোগ্যতা, ডেটা ব্যাকআপ, পুনরুদ্ধার এবং ডাউনটাইম, সফটওয়্যারের মাসিক বা বাৎসরিক খরচ।
তথ্য (Information ) | উপাত্ত (Data) |
---|---|
১. ডেটাকে প্রক্রিয়াকরণ করে যে অর্থবহ অবস্থা পাওয়া যায় তাকে তথ্য বলে। | অগোছালো অবস্থায় থাকা যেকোনো বর্ণ, চিহ্ন বা সংখ্যা এসব কিছুই হলো ডেটা বা উপাত্ত। |
২. সকল ডেটা তথ্য নয়। | সকল তথ্যই ডেটা। |
৩. যেকোনো তথ্য থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়। | ডেটা কোনো কিছুর পূর্ণাঙ্গ বা অর্থবহ ধারণা দিতে পারে না। |
৪. কোনো শ্রেণির একটি শিক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর, পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর প্রভৃতি একত্রে ঐ শিক্ষার্থীর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যকে নির্দেশ করে। | কোনো শিক্ষার্থীর ভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বরগুলো পৃথক পৃথকভাবে ডেটার উদাহরণ হতে পারে। |
ই-মার্কেটিং-এর কৌশল নির্ধারণে গ্রাহক নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। সাধারণ অর্থে যারা পণ্য বা সেবাসামগ্রী অনলাইনে ক্রয় করে তাদেরকে ই-ক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গ্রাহক বা ক্রেতারা আছে বলেই অনলাইন বিজনেস সম্ভব হয়েছে। গ্রাহক অনেক ধরনের আছে। কেউ আছে পণ্যটি ক্রয়ের আগ্রহ আছে, আবার এমন কেউ আছে যিনি পণ্যটি ক্রয়ের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আবার এমন গ্রাহকও আছেন যারা কনফার্ম পণ্যটি কিনবেন। এক্ষেত্রে অভীষ্ট গ্রাহক বাছাই করা এতটা সহজ ব্যাপার নয়। সকল মানুষ একটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক বা ক্রেতা নন। এক্ষেত্রে আমাদের ই-মার্কেটিং বিজনেসের প্রকৃত ক্রেতা কে তা চিহ্নিত করতে হবে। নিচে নির্দিষ্ট গ্রাহক/ক্রেতা নির্ধারণ করার পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো—
১. বাজার গবেষণা পরিচালনা (Conducting market research): প্রথমেই বাজারের সকলক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে। আর এজন্য প্রতিষ্ঠানের শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও হুমকি বিশ্লেষণ করতে হবে। বাজার গবেষণায় যে সকল বিষয় জড়িত সেগুলো নিম্নরূপ—
* গ্রাহকের অবস্থান ।
* গ্রাহকের বয়স, পেশা, আয়, ইত্যাদি বিষয়।
* গ্রাহকের মন, লাইফস্টাইল, আচার-আচরণ।
* বাজার প্রবণতা ।
* গ্রাহকের ক্রয় আচরণ।
* অন্যান্য ।
২. বর্তমান ক্রেতাদের সম্পর্কে জানা (Knowing present customers) : বর্তমান ই-মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় কারা কারা তোমার ক্রেতা তা চিহ্নিত করতে হবে। অভীষ্ট বা নির্দিষ্ট গ্রাহক নির্বাচনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারা তোমার বাজারজাতকরণকৃত পণ্য কিনছে তা জানতে হবে। কারা তোমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছে, তাদের প্রতিক্রিয়া কী ইত্যাদিও জানতে হবে।
৩. ক্রেতা বা গ্রাহক জরিপ (Customer surveys) : গ্রাহক বা ক্রেতা নির্ধারণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ক্রেতা জরিপ। ক্রেতা জরিপের জন্য যেসব হাতিয়ার আছে সেগুলো ব্যবহার করে নির্দিষ্ট গ্রাহক চিহ্নিত করা যেতে পারে।
৪. ইন্টারভিউ পরিচালনা (Conducting interviews): নির্দিষ্ট গ্রাহক নির্ধারণে তাদের সাথে সরাসরি ফোন কল করা যেতে পারে। তাদের সাথে বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। ক্রেতারা কী পেতে চায়, কীভাবে পেতে চায় তা সরাসরি ক্রেতাদের নিকট থেকে জানা যেতে পারে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে ভিডিও কলের মাধ্যমে ক্রেতাদের সাথে ইন্টারভিউ পর্ব সম্পন্ন করা যেতে পারে।
৫. প্রতিযোগী বিশ্লেষণ (Competitor analysis) : সমজাতীয় পণ্যের বিক্রয়কার্য পরিচালনা করে এমন কোম্পানিগুলো একে অপরের প্রতিযোগী। এক্ষেত্রে প্রতিযোগীরা কীভাবে তাদের নির্দিষ্ট গ্রাহক চিহ্নিত করছে সে বিষয়গুলো জানতে হবে। প্রতিযোগী কোম্পানির পণ্য কিনছে না এমন গ্রাহকদের টার্গেট করে মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করলে সফল হবার সম্ভাবনা বেশি।
৬. সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের ব্যবহার (Use of search engine optimization - SEO): এসইও (SEO) টুল ব্যবহার করে সম্ভাব্য গ্রাহকদেরকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্য অনুরোধ জানানো যেতে পারে। সম্ভাব্য ক্রেতা বা গ্রাহকরা ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর অনেকের পণ্য ক্রয়ের আগ্রহ বাড়তে পারে ।
৭. ক্রেতার প্রতিক্রিয়া জানা (Knowing customer feedback): তোমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একজন গ্রাহক তার ভালো লাগা, ভালো না লাগার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এভাবেও নির্দিষ্ট গ্রাহক চিহ্নিত করা যায়।
৮. ক্রেতাদের প্রয়োজন নির্ধারণ (Determining customer needs): ক্রেতাদের প্রয়োজন, পছন্দ বা চাহিদা জেনেও অভীষ্ট গ্রাহক নির্ধারণ করা যায়। আমরা অনলাইনে যে পণ্য বিক্রি করতে চাচ্ছি তা যদি গ্রাহকের পছন্দ হয় তাহলে সেই গ্রাহকই হবে নির্দিষ্ট গ্রাহক।
৯. সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার (Use of social media): অভীষ্ট গ্রাহক নির্ধারণের সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি হলো সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট ইত্যাদির মাধ্যমেও আমরা সম্ভাব্য গ্রাহক নির্ধারণ করতে পারি।
মার্কেট বলতে কোনো পণ্য বা সেবার বর্তমান ও সম্ভাব্য ক্রেতা সমষ্টিকে বোঝায়। মার্কেট মানেই হলো ক্রেতাদের সমষ্টি। কীভাবে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়, তাদেরকে কীভাবে ধরে রাখা যায়, সে বিষয়ে চলছে বিশ্বব্যাপী গবেষণা। মার্কেট তৈরি বলতে ক্রেতাসাধারণ তৈরি বা সৃষ্টিকে বোঝায় । ক্রেতাদেরকে আকৃষ্ট করা পৃথিবীর চ্যালেঞ্জিং কয়েকটি কাজের মধ্যে একটি। মার্কেট বা ক্রেতা তৈরিতে যেসব পদক্ষেপ রয়েছে, সে সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. সুষ্ঠু পরিকল্পনা (Proper Planning): মার্কেট তৈরিতে প্রথমেই শুধু পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। কারা বর্তমান ক্রেতা, কারা সম্ভাব্য ক্রেতা ইত্যাদি বিষয়ে পরিকল্পনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
২. মার্কেট রিসার্চ বা গবেষণা (Market research) : বাজার পরিস্থিতি বা ট্রেন্ড নিয়ে গবেষণা কার্য পরিচালনা করতে হবে। বাজার গবেষণা করেই ক্রেতাদের সার্বিক পরিস্থিত সম্পর্কে জানা সম্ভব। এর মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাদেরকে প্রকৃত ক্রেতায় রূপান্তরের পদক্ষেপ চিহ্নিত করা সম্ভব।
৩. শক্তিশালী বাজেট প্রণয়ন (Building a strong budget): ক্রেতা বা মার্কেট তৈরিতে শক্তিশালী বাজেটের প্রয়োজন। কেননা ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ও তাদের প্রকৃত ক্রেতায় পরিণত করতে প্রচুর বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন।
৪. বিশ্বব্যাপী প্রচার (Worldwide Publicity): মার্কেট তৈরিতে বিশ্বব্যাপী প্রচারকার্য পরিচালনা করতে হবে। প্রচার যত বেশি হবে ক্রেতাদের ততই মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব হবে। ট্রেডিশনাল ও ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
৫. বাজার বিভক্তিকরণ (Market Segmentation): একটি মার্কেটকে যখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা হয় তখন তাকে বাজার বিভক্তিকরণ বলে। একটি ক্ষুদ্র মার্কেটকে টার্গেট করে এগুনোর চেষ্টা করলে খুব দ্রুত মার্কেটে প্রবেশ করা যায় ও তাদেরকে ধরে রাখা যায়।
৬. কৌশল গ্রহণ (Taking proper strategy): ক্রেতা বা মার্কেট সৃষ্টিতে কৌশল গ্রহণ একটি বিশেষ পন্থা হিসেবে বিবেচিত। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী ক্রেতা সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে। ক্রেতাদের প্রয়োজন, অভাব, চাহিদা, আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন- ক্রেতাদের আর্থিক দিক বিশ্লেষণ করে মিনি প্যাক শ্যাম্পু তৈরি করা হয়েছে।
৭. নতুন ক্রেতা সৃষ্টি ও পুরাতন ক্রেতা ধরে রাখা (Creating new customer and retaining old customers): মার্কেট তৈরির অন্যতম কার্যকর পদক্ষেপ হলো নতুন ক্রেতা সৃষ্টি ও যারা পুরাতন ক্রেতা রয়েছে তাদেরকে ধরে রাখা।
৮. প্রতিযোগী বিশ্লেষণ (Competitor analysis): মার্কেট বা ক্রেতা তৈরিতে প্রতিযোগীরা কী কী কৌশল গ্রহণ করছে তা জানা ও সে অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ।
৯. পরিপূরক পণ্য বা সেবা যোগ (Add complementary products or services): মার্কেট তৈরির আরেকটা কার্যকর পদক্ষেপ হলো পরিপূরক পণ্য বা সেবা যোগ। যেমন— কেউ যদি অনলাইনে দু'টি ড্রেস ক্রয় করে তাহলে দু'টি ড্রেসের সাথে পরিপূরক পণ্য হিসেবে একটি গেঞ্জি যোগ করে দেওয়া।
কৌশল হলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের পন্থা বা উপায়। ট্রেডিশনাল মার্কেটিং হলো পৌরাণিক বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে (যেমন- রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি) ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর সফলতা নির্ভর করে তার গৃহীত কৌশলের ওপর। নিচে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর কৌশলসমূহ আলোচনা করা হলো-
উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং-এর যেসকল ধরন রয়েছে এবং কী কী কৌশল গ্রহণ করা যায় তা নির্ধারণ করতে হবে।
১. বিলবোর্ড কৌশল ( Billboards strategy): বিলবোর্ড অবশ্যই ইলেকট্রিক বা সুন্দর হাতের লেখায় প্রিন্টেড হতে হবে। বিলবোর্ড এর স্থান নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি এক্ষেত্রে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, বিল্ডিং এর নিকটবর্তী জায়গায়, শপিংমলের কাছে যেখানে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব সেখানে বিলবোর্ড টাঙানো যেতে পারে।
২. প্রিন্ট অ্যাডস কৌশল ( Print ads strategy): বিভিন্ন পত্রিকার কোন পাতার কোন অংশে বিজ্ঞাপনটি দিলে গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হবে তা বিবেচনা করতে হয়। বিজ্ঞাপনটি কোন বয়সের মানুষের জন্য দেওয়া হচ্ছে তা চিন্তা করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। যেমন: স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পত্রিকায় 'খেলার পাতা' পেইজটি মনোযোগ সহকারে পড়ে। তাই, পণ্যটি যদি কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জন্য হয় সেক্ষেত্রে 'খেলার পাতার' পেইজটিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে।
৩. টেলিমার্কেটিং কৌশল (Telemarketing Strategy): টেলিমার্কেটিং হলো এমন একটি কৌশল যে কৌশলে ক্রেতাদেরকে সরাসরি ফোন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ফোনের মাধ্যমে ক্রেতাদেরকে প্ররোচিত করে পণ্য বা সেবা ক্রয়ে আকৃষ্ট করা হয়।
৪. ফেস-টু-ফেস ইন্টারেকশন কৌশল ( Face-to-face interaction strategy): ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো ফেস-টু-ফেস ইন্টারেকশন। এ ধরনের মার্কেটিং কৌশলে অনেকেই অভ্যস্ত। ক্রেতাদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে তাদেরকে পণ্য ক্রয়ে আকৃষ্ট করা হয়।
৫. ইভেন্ট মার্কেটিং কৌশল (Event marketing strategy): ক্রেতাদেরকে পণ্য ক্রয়ে আকৃষ্ট করার জন্য অনেক সময় বিভিন্ন মেলা, কনসার্ট ইত্যাদি প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। এ কৌশলে মানুষ সহজেই ক্রেতায় পরিণত হয়।
৬. টেলিভিশন বিজ্ঞাপন কৌশল (Television advertising strategy): একসময়ে টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা এবং এর দর্শক সবচেয়ে বেশি ছিল। তখন বিশ্বের নামি-দামি কোম্পনিগুলো তাদের পণ্যের ব্যাপক প্রচারের জন্য টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিত যা আজও চলমান। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আকর্ষণীয় ও আবেগীয় বিজ্ঞাপন খুবই কার্যকর।
৭. রেডিওর ব্যবহার (Radio) : প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহকদের কাছে পণ্যের পরিচিতি তুলে ধরতে রেডিওতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৩০/৪০ বছর আগে রেডিও অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল। রেডিওতে বিজ্ঞাপন দিয়ে তখন সহজেই গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হতো।
ইন্টারনেট বা অনলাইনভিত্তিক বিশ্বব্যাপী ক্রয়-বিক্রয়ের ডিজিটাল পদ্ধতিই হলো ই-মার্কেটিং। ই-মার্কেটিং- এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হয়ে থাকে। নিচে ই-মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে গৃহীত কৌশলসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম (Social media marketing platform) : বিশ্বব্যাপী পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ ও তাদের ধরে রাখার জন্য কোম্পানিগুলো। যেসকল কৌশল অবলম্বন করে সেগুলো হলো-
* ফেসবুক (Facbook) বা মেটা * ইনস্টাগ্রাম (Instagram ) । * লিংকডইন (Linkedin ) । * স্ন্যাপ চ্যাট (Snapchat) * টুইটার (Twitter) । * পিন্টারেস্ট (Pinterest)। * ইউটিউব (Youbube )। |
২. ই-মেইল মার্কেটিং কৌশল ( E-mail marketing strategy): ই-মেইল মার্কেটিং কৌশল হলো এমন একটি কৌশল যেখানে বিক্রেতা ক্রেতাদের নিকট অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের অফার করে। এক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত অফারও অনেকে প্রদান করে থাকে। যেমন: পণ্যের অর্ডারের ওপর ভিত্তি করে ১০% ডিসকাউন্ট অথবা ফ্রি শিপিং ফি ইত্যাদি।
৩. মোবাইল মার্কেটিং (Mobile marketing): ই-মার্কেটিং-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌশল হলো মোবাইল মার্কেটিং। যে কেউ যখন-তখন যেকোনো স্থান থেকে মোবাইলের মাধ্যমে মার্কিটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। অনেকেই মনে করেন আগামী দশক হবে মোবাইল মার্কেটিং-এর যুগ।
৪. পে-পার-ক্লিক (Pay-per-click): এটি হলো এক ধরনের Paid advertising ফর্ম। এ প্রক্রিয়ায় ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ক্রয় করা যায়। এক্ষেত্রে মার্কেটারগণ বিভিন্ন ওয়েবসাইট অথবা সার্চ ইঞ্জিন (যেমন : গুগল, মাইক্রোসফট, বিং) এ বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে এবং প্রতিটি বিজ্ঞাপনে ক্লিক-এর বিপরীতে ফি প্রদান করতে হয়।
৫. উন্নত ওয়েব ডিজাইন (Developed webdesign): ই-মার্কেটিং-এর আরেকটি কৌশল হলো উন্নত আধুনিক ওয়েব ডিজাইন। কেননা "First impression is the best impression. " ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের অন্যতম হাতিয়ার বা কৌশল হলো আধুনিক ওয়েব ডিজাইন তৈরি করা। এমন সহজ, পরিষ্কার, স্বচ্ছ ও ইন্টারেস্টিং ওয়েব ডিজাইন তৈরি করতে হবে, যেন গ্রাহকদের চোখে পড়া মাত্রই তারা মনোযোগী হয়ে ওঠে।
উপরে উল্লিখিত কৌশল ছাড়াও ই-মার্কেটিং-এর আরও যেসকল কৌশল রয়েছে তার মধ্যে Search engine operation, content marketing ইত্যাদি অন্যতম।
কর্ম-পরিকল্পনা বলতে কোম্পানির মার্কেটিং কৌশলসমূহ কোথায়, কীভাবে এবং কার দ্বারা বাস্তবায়িত হবে তার একটি গাইডলাইন বা কর্মসূচিকে বোঝায়। মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়নের কর্ম-পরিকল্পনার সময় প্রথমেই যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে সেগুলো হলো—
* কী করতে হবে?
* কখন করতে হবে?
* কাজটি করার জন্য কে দায়ী থাকবে?
* কাজটি বাস্তবায়নে কতো খরচ হবে?
নিচে মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়নের কর্ম-পরিকল্পনাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো—
১. বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা সেটকরণ (Setting realistic expectations): প্রত্যাশার সাথে বাস্তবতার মিল রেখে লক্ষ্য বা কৌশল গ্রহণ করতে হবে। মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়নের প্রথম কর্ম-পরিকল্পনা হলো বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা সেট করা। এক্ষেত্রে কোম্পানির সকলে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়নের জন্য এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে প্রেসার কম থাকে ও ঝুঁকিও কম থাকে ।
২. ডকুমেন্টস সংগ্রহ (Collecting documents) : কোম্পানির কৌশল বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সকল ডুকুমেন্টস সংগ্রহে রাখতে হবে। প্রত্যাশা সেট হবার পর কৌশল বাস্তবায়নে সকল ডকুমেন্টস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ডকুমেন্টসের অভাবে অনেক মার্কেটারগণ তাদের কৌশল বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়। যেমন— কেউ বিলবোর্ড ব্যবহার করতে চাইলে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়।
৩. গ্রেট টিম প্রতিষ্ঠা (Building a great team): মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়ন করতে হলে একটি দক্ষ ও কার্যকর টিম থাকতে হবে সেখানে সবাই কর্ম-পরিকল্পনা নির্দিষ্ট করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
৪. কাজের টাইম-লাইন তৈরি (Building time line of work): একটি মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়নে তার একটি টাইম-ফ্রেম থাকে। প্রত্যেকটি কাজের সফলতা পেতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট টাইম-লাইনের দরকার পড়ে। টাইম-লাইন থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায়।
৫. কর্মপ্রবাহ তৈরি (Creating workflows) : মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কর্মপ্রবাহ তৈরি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এরূপ কর্মপ্রবাহ তৈরির ফলে টিম সদস্যদের কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কী কী পদক্ষেপের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করা হবে তার একটি গাইডলাইন পাওয়া যায়।
৬. সম্পদ চিহ্নিতকরণ (Identing resources): মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়নে কোম্পানির কী কী সম্পদ বা সামর্থ্য রয়েছে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। যেমন- টেকনিক্যাল ওয়ার্কার হলো এক ধরনের বিশেষ সম্পদ।
৭. নিয়মিত অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ (Monitoring Progress regularly): মার্কেটিং কৌশল বাস্তবায়ন হলো একটি গতিশীল বা ডাইনামিক প্রক্রিয়া। গৃহীত মার্কেটিং কৌশলটি যথাযথভাবে এগুচ্ছে কি-না তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পর্যবেক্ষণের সময় কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
আরও দেখুন...